বাংলাদশে শিশু শিক্ষার বর্তমান অবস্থা

বাংলাদশে শিশু শিক্ষার বর্তমান অবস্থা যদি আপনি পর্যালোচনা করে দেখেন, তো দেখবেন বেশিভাগ বাব-মা ই তাদের সন্তানের ভবিষ্যতের ব্যাপারেই যতই সচেতনতা দেখাক না কেন তারা আসলে তাদের শেখার ব্যাপার টা নিয়ে খুবই উদাসীন! তাদের শৈশবের প্রতিটি পদক্ষেপ যে তাদের জন্য গুরুত্ব পূর্ণ এটা তারা একেবারেই ভুলে যান।অনেক সময় মজার ছলে তাকে যে বলে, বাবা, তুমি এটা করলে আমি তোমাকে ওটা দিব এবং পরে যখন দেন না এবং এর ফলে তার মিথ্যা শেখা প্রথম সিড়িতে পর্দাপণ ঘটল এটাও তার খেয়াল রাখেন না।
Child Learning

বাংলাদেশে শিশু শিক্ষা
তারা তাদেরকে নিয়ে প্রতিযোগিতায় ঠিকই লিপ্ত হয়, তারা কোথায় কোথায় পড়বে, কি কি শিখবে, কেন শিখবে, কোথায় পড়লে তাদের সামাজিক আত্মমর্যাদার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে বা আত্মীয় স্বজন বা পাশের বাসার মানুষের সাথে গল্প করতে পারবে।কিন্তু তারা কি ভাবে চিন্তা করতে শিখবে বা কি কি উপায়ে কোন কিছু কিভাবে শিখতে হয়, কোথায় কিভাবে কথা বলতে বা চলতে হয় এগুলা শেখার পিছনে খুব বেশি সময় বা সচেতনতা ব্যয় করেন না।
একটা শিশু প্রথম দেখায় কোন কিছু যেভাবে মনে রাখে বা শেখে, তেমনি কোন ভুল শিক্ষার ব্যাপারের তাকে বাধা প্রদান করলেও সে একই ভাবে শেখে।তার এসব প্রথম শিক্ষার প্রভাব তার জীবনে আজীবন চলতেই থাকে।
এসময় তাকে যেমন ভাল বন্ধু বা সঙ্গী নির্বাচন করে দেওয়া জ্রুরি তেমনি শুদ্ধ মাতৃভাষা বা উচ্চারণ শেখার উপর জোর দেওয়াও জরুরি।
তার প্রতিটি কাজ কর্ম, কথা,পছন্দ বা ইচ্ছা থেকে যেমন আমরা তার সম্পর্কে জানতে পারি ঠিক তেমনি জানতে পারি আনন্দ এবং বেদনার বহিঃপ্রকাশ মাধ্যমেও। অন্য সহপাঠী এবং মানুষের প্রতি তার ধারণা, কোন বিব্রত পরিস্থিতিতে তার আচরণ বা কোন না বলা জিনিসের বিষয়ে তার পূর্ণ অভিব্যক্তি। একটি শিশুর মন হওয়া উচিত খুবই পরিষ্কার এবং স্বচ্ছ,  বিশেষ করে অন্য ধর্ম বা অন্য শ্রেণীর মানুষের প্রতি। সামাজিক বিভেদ যদি খুব অল্প বয়সে তাকে স্পর্শ করে যায় এবং সে নেতি বাচক আচরণ করতে শেখে এটা অবশ্যই তার ভবিষ্যতের জন্য সুখকর হবে না। আর এসমস্ত বিষয়াবলী কিন্তু বাচ্চাটি একা একা শেখে না, তাকে শেখানো হয় বা সামাজিক পরিবেশের আশে পাশ থাকে সে ক্রমাগত সংগ্রহ করতেই থাকে।
যেমন আমরা খুব ছোটবেলা থেকে একটা বাচ্চাকে নির্ধারণ করে দেয় যে,সে কি কি নিয়ে খেলা করবে, যেমন মেয়েদের ক্ষেত্রে হাড়িপাতিল বা পুতুল এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে গাড়ী, বন্দুক বা অস্ত্র। তাই এখান থেকে সে একটা ধারণা লাভ করতে শিখে গেল যে,  আরেক টা বাচ্চা থেকে সে একটু ভিন্ন যেহেতু তার খেলনার বিষয়াবলী ভিন্ন। আর এই ছোট বাচ্চা -যাদেরকে আমরা লিঙ্গ বৈষম্য না করে শিশু বলি, তারাও শিখে গেল কিভাবে ছেলে মেয়ে আলাদা হয় বড় হতে হয় এ সমাজে।
এছাড়া আমরা আরো অনেক বিষয় বলে থাকি যে এটা ছেলেদের নয়, ওটা মেয়েদের জন্য নয়।ছেলেরা আবার কাদে নাকি? মেয়েরা আবার খেলা করে নাকি? এমন অনেক কিছু।
প্রতি নিয়ত আমাদের এই সব সামাজিক নেতিবাচকতা, তাদেরকে আষ্টেপিষ্ঠে বেধে রাখছে জালের সুতার মত এভাবে ।আর তারাও বড় হয়ে এগুলা চর্চা করতে থাকে যুগের পর যুগ ধরে শৈশব কালীন আদর্শ শিক্ষা হিসেবে ।
যেমন শাশুড়ি বলে, আমার শাশুড়ি আমার সাথে এমন ব্যবহার করছে তাই আমিও আমার বউ এর সাথে এমন ব্যবহার করছি। আবার আমাদের প্রবীণেরা প্রায় ই একটা কথা বলে থাকে যে, আমাদের সময়ে আমরা এসব শুনি নাই/ছিল না _ তাই এগুলা আমরা মানি না বা পছন্দ করবোও না । এমন অনেক শৈশব গোড়ামি আমাদের মধ্যে কাজ করে, যার শিক্ষা কিন্তু সে পেয়েছিল সেই শৈশবেই।
তার মানে দাড়াল আমাদের শৈশবের প্রতিটি শিক্ষা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন এবং এর প্রভাব সুদূর ভবিষ্যত পর্যন্ত ও চলতে থাকে ।
তাই আমি আমাদের আদর্শলিপিতে অ তে অজগর এবং আ তে আম পড়ার ঘোর বিরোধী, কারণ এখানে বলা আছে, অজগর টি আসছে তেড়ে এবং আমটি আমি খাব পেড়ে ।যেখানে এক জায়গায় হিংস্র প্রাণি দিয়ে তার প্রথম শেখা শুরু এবং অপর ক্ষেত্রে কিভাবে সে আমটি নিবে তা বলা নেই- মানে নৈতিক শিক্ষা টা স্পষ্ট নয়। যার প্রভাব বিদ্যমান আমাদের আজকের মনুষ্য হিংস্র রুপ এবং অনৈতিক সমাজ। যার প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে এই অনৈতিকতা এবং হিংসাত্মক মনোভাব প্রতিনিয়ত বিদ্যমান এবং দৃশ্যমান।
কিন্তু আমরা যদি অদূর সুন্দর এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চাই, তাহলে আমাদের শিশু শিক্ষা -র প্রতি গুরুত্ব দেওয়া ছাড়া বিকল্প কোন পথ নাই।একটিশুশুর বেড়ে উঠার পরিবেশ যত সুন্দর হবে, তার ভবিষ্যত এবং মেধা তত বেশি উন্নত হবে এবং তত দ্রুত আমরা আমাদের সোনালী বাংলাদেশ পাওয়ার আশা করতে পারবো এই উন্নত শিশু শিক্ষা পাওয়া দেশের আগামী কান্ডারীদের হাত ধরে।
তাছাড়া তাদের যেন তেন ভাবে বেড়ে উঠা মানে দেশকে অনৈতিক এবং অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির দিকে কয়েক ধাপ এগিয়ে দেওয়া। তাদের শিক্ষা যখন বৈষম্য মূলক হবে, তারা আগামীতে তত বেশি বৈষম্য মূলক আচরণ করতেই থাকবে, তাদের শিক্ষা যত অনৈতিক হবে তারা দেশে বসে তত বেশি দুর্নীতি করতে থাকবে। শিক্ষিত হয়ে ও তাদের আচরণে পশুত্ব এবং অমানবিকতা বিরাজ করবে।
সন্ত্রাস, রাহাজানি এবং দেশের ক্ষতি করতে তাদের বিন্দু মাত্র বাধবে না। কারণ দেশ প্রেম নিয়ে তারা তো কখনো বড়ই হয়নি। শুধু বছরে একবার বিজয় এবং ভাষা দিবস পালনের মাধ্যমে শুধু দেশপ্রেম অর্জন সম্ভব নয়,  এজন্য শিশু শিক্ষার মাধ্যমে তাদেরকে ক্রমাগত অনুশীলন এবং দেশের জন্য কাজ করিয়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বুঝাতে হবে দেশ -আমার, তোমার সকলের মা একে রক্ষা করা এবং এর এজন্য কাজ করা দায়িত্ব আমাদের সকলের।
বিভিন্ন আদর্শ এবং মতবাদ একটা শিশুর জন্য বেশ ভাল ক্ষতি করে, কারণ সে জন্ম নিয়েছিল একটি উন্মুক্ত স্বচ্ছ পরিবেশে,  সকলের মত একই হাত পা মাথা নিয়ে নিয়ে ।কিন্তু সমাজ তাকে এ ই মানুষ গুলার মধ্যে বিভেদ করতে শেখালো, শেখাল কিভাবে বিভেদ/বিরোধ হলে অন্যের সাথে মারামাতি এবং হানাহানি করতে হয়। শ্রদ্ধা নয় এখানে জোরজার মুল্লুক তার এই নীতি গ্রহণ করতে হয়।
তকে শেখায় সে যদি তার ঘরের আদরে সন্তান হয়ে নিজ হাতে তার কাজ করে,তাহলে তার নিজস্ব আত্মসম্মান কিভাবে ভূলুন্ঠিত হবে। অন্যের ঘাড়ে কাঠাল ভেঙ্গে খেলে- কিভাবে কম পরিশ্রমে ফাইদা লুটা যাবে,  কিভাবে মিথ্যা বলে খুব সহজে পার পাওয়া যাবেঈবং কিভাবে নিজের দোষ অন্যের উপর চাপিয়ে নিজে ভাল থাকা যাবে সহ এমন অনেক আরো অমানবিক শিক্ষা এবং অগ্রহণযোগ্য প্রথা।
অথচ এগুলার পুরোটায় উল্টা হতে পারত তার প্রথম পাওয়া শিশু শিক্ষা ক্ষেত্রে, সে চিন্তা করতে শেখতে পারত যেন, তার দ্বারা অন্যের ক্ষতি না হয় এবং তার প্রতিটি নিজ কাজের দায়িত্ব তার একান্তই নিজের।কোন ভুল হলে বুঝে না বুঝে যদি সে দুখ প্রকাশ করতে শিখতো তাহলে তার মধ্যে যেমন অহংবোধ জাগ্রত হত না, তেমনি সে অন্যকে সর্বদা শ্রদ্ধার চোখে দেখতে শিক্ষত। ধনী বা উচ্চ শ্রেণীর হলে হলেই যে শুধু সকল সেবা পাওয়ার অধিকার সে রাখে, এই মানসিকতা থেকেও সে নিজেকে যোজন যোজন দূরত্বে সরিয়ে রাখতে পারত।
তাই আমরা ইয়ুথ আই লার্নিং সেন্টার চাই, এমন একটা শিশু মাধ্যম পরিবেশ তৈরি করতে যেখানে তারা সর্বদা দেশপ্রমে উদ্বুদ্ধ হয়ে, আগামী সুন্দর,সোনালী স্বপ্নের উন্নত 
ভবিষ্যত বাংলাদেশ আমাদের উপহার দেবে এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের শিক্ষা এবং সকল অধিকার তারা বাস্তবায়ন করবে।
https://youtheyefoundation.blogspot.com/
collected  youtheye/feminaera

No comments

Powered by Blogger.